আফগানিস্তান থেকে এক উদ্ধার ফ্লাইটে তুরস্ক পৌঁছান নিলুফার৷ সেখানে বসবাসের অনুমতিও পেয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু সেই অনুমতি একসময় শেষ হয়ে যায়৷ তারপর তুরস্কে কাজের সুযোগ না পেয়ে বলকান রুট ধরে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা শুরু করেন নিলুফার৷ চলুন জানা যাক তার গল্প:
‘‘তালেবান কাবুল দখলের দিনটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দিন,’’ বলেন নিলুফার৷ ‘‘এটা শুধু আমার নয়, সব আফগান, বিশেষ করে নারীদের কথা৷ আমরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত ছিলাম এবং যেকোনোভাবে দেশত্যাগে আগ্রহী ছিলাম,’’ বলেন তিনি৷
২৪ বছর বয়সি নিলুফারের ভাগ্য ভালো বলতে হবে৷ গতবছরের আগস্টে আফগানিস্তান ত্যাগ করেন তিনি৷ তুর্কি সেনাবাহিনীর এক বিমানে প্রথমে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পৌঁছান তিনি৷ এরপর সেখান থেকে তুর্কি এয়ারলাইন্সে তুরস্ক৷
‘‘সেই ফ্লাইটে তিনশো যাত্রী ছিল৷ আমি ছাড়া সবাই তুরস্কের নাগরিক৷ আর আমার তুরস্কে বসবাসের অনুমতিপত্র ছিল,’’ শান্তভাবে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন তিনি৷
তখন অবশ্য খুব একটা ভালো লাগেনি তার৷ জীবন বাঁচাতে দেশত্যাগ করতে পেরেছেন ঠিকই, কিন্তু সেখানে ফেলে এসেছেন তার সবকিছু৷ ফলে দেশের জন্য, পরিবারের জন্য তখন কেঁদেছেন নিলুফার৷
‘কঠোর পরিশ্রমী মানুষ আমি’
বয়স সবে ২৪ বছর হলেও ইতোমধ্যে অনেক কাজে যুক্ত হয়েছেন নিলুফার৷ সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন, কাজ করেছেন বিমানবালা হিসেবে৷ আফগান নারী বোলিং ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টও তিনি৷ পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন, জানেন ইংরেজি এবং তুর্কি ভাষাও৷
নানাকিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় তালেবানের হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কায় ছিলেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি টেলিভিশনে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতাম৷ ২০১৬ সালে তালেবান এবং আইসিস নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করেছিলাম৷ তখন অনেকে অনুষ্ঠানটি লাইভ দেখে নানা মতামত দিচ্ছিলেন৷ কিন্তু একজন স্টুডিওতে হাজির হয়ে বলেন এক্ষুণি অনুষ্ঠানটি বন্ধ করো৷’’

তালেবান ক্ষমতায় না থাকতেই পরিস্থিতি এরকম ছিল৷ ফলে ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠীটি ক্ষমতায় আসায় পরিস্থিতি কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়৷
ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা
ইউরোপে প্রবেশের আশায় গত মে মাসে তুরস্ক থেকে বসনিয়া ফ্লাই করেন নিলুফার৷ কিন্তু সেখানে অ্যাসাইলাম নেয়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে বলে মনে হয়নি তার কাছে৷ তাই দালালচক্রের সহায়তায় এক পর্যায়ে পায়ে হেঁটে ক্রোয়েশিয়া হয়ে ইটালি যাওয়ার চিন্তা করেন তিনি৷
‘‘সেটা অত্যন্ত বিপজ্জনক যাত্রা ছিল,’’ বসনিয়া থেকে ক্রোয়েশিয়া যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন নিলুফার৷ ‘‘হঠাৎ পুলিশের গুলির শব্দ শুনতে পাই৷ আমার সঙ্গে থাকা পুরুষরা তখন আমাকে একা রেখে পালিয়ে যান,’’ যোগ করেন তিনি৷
আরও পড়ুন: চাকরির পরীক্ষা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে বসনিয়া
ক্রোয়েশিয়া পুলিশ তখন তাকে বসনিয়ায় ফেরত পাঠান৷ ছয় ঘণ্টার মতো জঙ্গলে পায়ে হাঁটার পর বসনিয়ার এক রাস্তায় উঠতে সক্ষম হন৷ সেই যাত্রায় ইটালি যেতে ব্যর্থ হলেও দালালরা তার কাছ থেকে যে চার লাখ টাকা নিয়েছিলেন তা আর ফেরত দেয়নি৷
অনিশ্চিত ভবিষ্যত
বসনিয়ায় অর্থাভাব দেখা দিলে কিছুদিন আগে সেখান থেকে ফ্লাইটে ইরানে চলে যান নিলুফার৷ তেহরানে অবস্থান করে তুরস্কে বসবাসের অনুমতি আবারো নবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি৷ কিন্তু সেটা কিছুদিনের জন্য৷ এরপর আবারও নতুন কোনো গন্তব্য খুঁজতে হবে তাকে৷
কারণ কোনোভাবেই আফগানিস্তানে ফিরে যেতে চান না নিলুফার৷ চান না তার জীবনের সোনালী সময়টা এভাবে ভাসমান অবস্থায় কেটে যাক৷ ভবিষ্যতে তাই ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশে আশ্রয় পাওয়াটাই লক্ষ্য তার৷
এআই/কেএম