দালালের খপ্পরে পড়ে সাড়ে আট লাখ টাকায় ঢাকা থেকে দুবাই, সিরিয়া ও লিবিয়া হয়ে ইটালি যেতে চুক্তিবদ্ধ হন বাংলাদেশি অভিবাসী মাহমুদ (ছদ্মনাম)৷ এই ভুক্তভোগী ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানিয়েছেন কিভাবে লিবিয়ার পুলিশ তিনিসহ আরও ২৪ জনকে টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশি দালালদের কাছে বিক্রি করে দেয়। বিস্তারিত পড়ুন সাক্ষাৎকারে৷
৩১ বছর বয়সি বাংলাদেশি নাগরিক মাহমুদ (ছদ্মনাম) দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে৷ শুরুতে ভালো চললেও লোকসানের কারণে ২০১৯ সালে দেশে ফিরতে বাধ্য হন তিনি।
হতাশাগ্রস্থ মাহমুদ এরপর দালালের খপ্পরে পড়ে ইটালি যাওয়ার পরিকল্পনা করেন৷ সাড়ে দশ লাখ টাকা খরচ করে এখন লিবিয়ায় কষ্টের জীবন কাটাচ্ছেন৷
তার মতে,
‘‘লিবিয়া এমন একটি দেশ যেখানে আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন পিছন থেকে আপনাকে বিক্রি করে ফেলবে৷’’
কিভাবে সেখানে পৌঁছালেন তিনি, গ্রেপ্তার হয়ে কেমন ছিলেন দেশটির আটককেন্দ্রে, কিভাবেই বা মুক্ত হলেন, এমন সব অভিজ্ঞতা মাহমুদ তুলে ধরেছেন ইনফোমাইগ্রেন্টসের কাছে৷
ইনফোমাইগ্রেন্টস: আপনি কেন ইউরোপে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন?
মাহমুদ: আমি ২০২১ সাল থেকে দীর্ঘ সাত বছরে ওমানে ছিলাম৷ সেখানে সফলতার সাথে ব্যবসা করছিলাম৷ এক পর্যায়ে ব্যবসায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়লে আমি ২০১৯ সালে দেশে ফিরে আসি৷ দেশে ফিরে অনেক কিছুই করার চেষ্টা করি৷ কিন্তু কিছুতেই সফল হতে পারছিলাম না৷ সে কারণেই মূলত আবারও বিদেশ আসার সিদ্ধান্ত নেয়া৷
ইনফোমাইগ্রেন্টস: লিবিয়া হয়ে ইটালি আসার জন্য দালালের খোঁজ কিভাবে পেলেন?
মাহমুদ: তিনি আমার এলাকারই লোক৷ আমাকে জানান পুরো প্যাকেজ সাড়ে আট লাখ টাকা লাগবে৷ এই টাকার মধ্যেই ঢাকা থেকে দুবাই, সিরিয়া হয়ে লিবিয়া পৌঁছানো হবে৷ পরে সেখান থেকে নৌকায় ইটালি৷ নিজের এলাকার লোক হওয়ায় এবং নানা সমস্যায় থাকায় তার কথার উপর আস্থা রেখে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
পড়ুন>>মানবাধিকার লঙ্ঘনে লিবিয়াকে সাহায্য ইইউর, অভিযোগ অভিবাসীদের
ইনফোমাইগ্রেন্টস: ঢাকা থেকে কিভাবে যাত্রা করলেন? লিবিয়ায় আসতে কতদিন লেগেছে?
মাহমুদ: আমি দালালের সাথে চুক্তি অনুযায়ী ২ আগস্ট ঢাকা থেকে এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইটে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরের উদ্দেশে যাত্রা করি৷ আমার সাথে একই দালালের মাধ্যমে চুক্তি করা আরও দুইজন ছিল৷
প্রথমে তারা আমাদের সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে প্রবেশ করান৷ দুবাইয়ে আমরা সাত থেকে আট দিন অবস্থান করি৷ পরে সেখান থেকে দালাল চক্র ‘বডি কন্ট্রাক্ট’ অর্থাৎ কোন প্রকার ভিসা ছাড়া আমি সহ প্রায় ৫০ থেকে ৫২ জন বাংলাদেশিকে সিরিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সিরিয়ায় দামেস্ক শহরের উদ্দেশে যাত্রার ব্যবস্থা করেন৷
দুবাই এয়ারপোর্টে আমাদের পাসপোর্টে কোন প্রকার সিল পর্যন্ত মারা হয়নি৷ এতে করে বুঝা যায়, এটি একটি অনেক বড় মানবপাচার চক্র, যাদের প্রশাসন এবং বিমানবন্দরে গভীর যোগাযোগ রয়েছে৷
১০ আগস্ট বিকালে আমরা সিরিয়ার দামেস্ক শহরে এসে পৌঁছাই৷ পরে সন্ধ্যায় আরও ১০০ জনেরও বেশি অভিবাসী আমাদের সাথে পরবর্তী ফ্লাইটের জন্য যোগ দেয়৷ ১১ আগস্ট ভোর রাতে তিনটায় আমরা প্রায় ১৬০ জন বাংলাদেশি লিবিয়ার বেনগাজী বিমানবন্দরে অবতরণ করি৷ কোন প্রকার ভিসা ছাড়াই আমাদেরকে সিরিয়া থেকে ফ্লাইটে লিবিয়ায় নিয়ে আসা হয়৷
ইনফোমাইগ্রেন্টস: লিবিয়ায় আসার পর আপনাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়? সমুদ্র পাড়ি দেয়ার প্রস্তুতি কিভাবে নিলেন?
মাহমুদ: বেনগাজিতে আসার পরে ১৬০ জন বাংলাদেশির মধ্যে আমরা মাত্র আট জন এই অঞ্চলে থেকে যাওয়া৷ বাকিরা সবাই রাজধানী ত্রিপোলিতে চলে যান৷ উল্লেখ্য, এখানে আমরা আটজন ছিলাম একই দালালের যাত্রী৷ বাকিরা ভিন্ন ভিন্ন দালালের মাধ্যমে এসেছেন৷
বেনগাজি বিমানবন্দর থেকে অত্যন্ত ভাঙ্গা রাস্তায় ৩০ মিনিট গাড়ি চালিয়ে একটি বাসায় নিয়ে আসা হয়৷ এসব ঘরকে এখানে অভিবাসীরা ‘গেইম ঘর’ বলে৷ কারণ এখানে থেকেই পরিবর্তিত সমুদ্র যাত্রা বা গেইমের চেষ্টা করা হয়৷ বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে আসার সময় লিবীয় দালালদের সাথে বাংলাদেশি দালালদের প্রতিনিধিও সাথে ছিলেন৷ তবে তারা অভিবাসীদের সাথে সৈকতে বা উপকূলে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন৷
১১ আগস্ট গেইম ঘরে পৌঁছে সেখানে গিয়ে দেখি আগে থেকেই আরও ৩২ জন বাংলাদেশি অবস্থান করছেন৷ আমাদের ৪০ জনকে সেখানে ছয় দিন রাখার পরে ১৭ তারিখ উপকূল থেকে নৌকায় ভূমধ্যসাগরে যাত্রা করার কথা বলা হয়৷ নৌকার চালক ছিলেন একজন সিরীয় নাগরিক৷ তিনি ছাড়া আমরা সবাই বাংলাদেশি৷ ১৭ আগস্ট দুপুর একটায় আমরা উপকূল থেকে যাত্রা করি৷
ইনফোমাইগ্রেন্টস: এভাবে উত্তাল সাগরে যাত্রা করতে গিয়ে ভয় করেনি? নৌকায় যাত্রার ঘটনা বর্ণনা করুন৷
মাহমুদ: আমরা লিবিয়া উপকূল থেকে মোট ৪০ জন বাংলাদেশি একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় যাত্রা শুরু করেছিলাম৷ নৌকায় আমাদের জন্য পানি, খেজুর আর কিছু শুকনো খাবার রাখা হয়েছিল৷
দূর্ভাগ্যজনকভাবে সেদিন ভূমধ্যসাগরের পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত খারাপ ও উত্তাল৷ টানা ২৫ ঘণ্টা নৌকা চলার পরে এক পর্যায়ে আমরা ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম৷ বোটে আমরা সাত-আট জন ছাড়া সবাই অত্যন্ত অসুস্থ্য হয়ে পড়লে সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল৷ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা আবারও একই উপকূলে ফিরে আসি৷
বোটে উঠার আগে আমাদের খুব পাতলা একটি লাইফ জ্যাকেট দেয়া হয়েছিল৷ যেটি দিয়ে নৌকা ডুবে গেলে বেশিক্ষণ সাগরে টিকে থাকা সম্ভব না৷ বলতে গেলে আমাদের মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল৷ সে কারণে আমরা সেদিন ফিরে এসেছিলাম।
ইনফোমাইগ্রেন্টস: লিবিয়া কোস্টগার্ড ঘনিষ্ঠ টুইটার একাউন্ট মাইগ্রেন্ট রেসকিউ ওয়াচ ২১ আগস্ট তাদের টুইটার একাউন্টে উপকূল থেকে ৩২ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনার একটি ভিডিও প্রকাশ করে৷ এই দলেই কি আপনারা ছিলেন? আপনারা তো ছিলেন সংখ্যায় ৪০ জন?
পড়ুন>>সমুদ্র থেকে অভিবাসীদের আটক করতে সাহায্য ইইউ ড্রোনের: এইচআরডাব্লিউ
মাহমুদ: জ্বি, সেই ভিডিওতেই আমরা ছিলাম৷ প্রকৃতপক্ষে আমরা উপকূল ত্যাগ করে ঐ অঞ্চলের একটি এলাকায় হাঁটার সময় কোস্টগার্ডের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলাম৷ আমাদের সাথে থাকা আট জন কোস্টগার্ড দেখে পালাতে সক্ষম হয়৷ বাকি ৩২ জন আটক হয়৷ আমাদের মূলত ১৭ তারিখ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷
ইনফোমাইগ্রেন্টস: কোস্টগার্ডের হাতে আটক হওয়ার পর আপনাদের সবার কী পরিণতি হলো?
মাহমুদ: লিবিয়া কোস্টগার্ড আমাদের আটকের পর একটি খোলা জায়গায় তপ্ত রোদে টানা চারদিন ফেলে রাখে৷ আমাদের কোন প্রকার খাবার দেয়া হয় নি৷ শুধু পানি খেয়ে বেঁচে ছিলাম৷ এই অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না৷ আমাদেরকে দালাল চাইলে কোস্টগার্ডের হাত থেকে নিয়ে আসতে পারত৷ আমাদের সাথে থাকা ৩২ জনের মধ্যে আট জন কোস্টগার্ড থেকে মুক্তি পেয়ে চলে যায়৷

ইনফোমাইগ্রেন্টস: পাঁচদিন পর কোস্টগার্ড কি আপনাদের ছেড়ে দেয়?
মাহমুদ: এটি হলে তো খুব ভাল হতো৷ কিন্তু চার দিন পর তারা আমাদের বাকি ২৪ জনকে লিবিয়ার বেনগাজির কাছে গামবুদা নামের একটি আটককেন্দ্র বা জেলে পাঠিয়ে দেয়৷ লিবিয়ার জেলের পরিবেশ অত্যন্ত ভয়ংকর ও অমানবিক৷
আমরা একটি কক্ষে একসাথে ৩২ জন ছিলাম৷ একজনের পরিমাণ খাবার দিত প্রতি বেলায় সেটি পাঁচজনকে ভাগ করে খেতে হতো৷ সকালে বাসি খাবার দিত এগুলো খাওয়া যেত না৷ সকালে নষ্ট ডাল দিয়ে গবজা নামের এক প্রকার বনরুটি দিত৷ আমি এগুলো খেতে পারিনি একদিনও৷
জেলে মোট পাঁচদিন ছিলাম৷ এটি জীবনের সবচেয়ে দুঃসহ অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি৷
ইনফোমাইগ্রেন্টস: সেখান থেকে কিভাবে মুক্তি পেলেন? আপনার সাথে কি ফোন ছিল?
মাহমুদ: সাধারণত এরা কোথাও অভিবাসীদের ফোন রাখতে দেয় না৷ কিন্তু আমার কাছে দুইটি ফোন থাকায় একটি নিতে পারে নি৷ সেটি দিয়ে দালালের সাথে যোগাযোগ এবং বেশ কিছু ছবি তুলেছিলাম৷
চারদিন জেলে থাকার পর লিবিয়া পুলিশ জনপ্রতি ৫০০ দিনারের (১০ হাজার টাকা) বিনিময়ে আমাদেরকে আবারও বাংলাদেশি দালালের হাতে তুলে দেয়৷ কিন্তু পরবর্তীতে দালাল আমাদের সবার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে৷ তারা জানায় পুলিশের সাথে গোপন চুক্তি করে অনেক কষ্টে তাদের ছাড়ানো হয়েছে৷
আমি বাধ্য হয়ে দালালের বাংলাদেশ প্রতিনিধির একটি বাংলাদেশি ব্যাংক একাউন্টে আমার পরিবারের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা পরিশোধ করি৷ যদিও আমার সাথে চুক্তি ছিল ইটালি পৌঁছানো পর্যন্ত সাড়ে আট লাখ টাকা কিন্তু আরও অতিরিক্ত দুই লাখ টাকা সহ আমি সাড়ে দশ লাখ টাকা এরমধ্যে দিয়ে দিয়েছি৷ এভাবে নানা অজুহাতে জিম্মি করে তারা টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে নেয়৷ এসব পরিস্থিতিতে করার তেমন কিছুই থাকে না৷
ইনফোমাইগ্রেন্টস: এখন আপনার পরিকল্পনা কী? এভাবে যারা বাংলাদেশ থেকে আসতে চান তাদের উদ্দেশে আপনি কী পরামর্শ দিবেন?
মাহমুদ: লিবিয়াতে সবচেয়ে বড় মাফিয়া হলো বাংলাদেশি দালালেরা৷ লিবিয়া এমন একটি দেশ যেখানে আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন পিছন থেকে আপনাকে বিক্রি করে ফেলবে৷ এমনকি আমাদের যে বাসায় রাখা হয় সেই বাসার সামনেও যেতে দেয় না৷
লিবীয় আর বাংলাদেশি মাফিয়ারা মানুষের কাতারে পড়ে না৷ জেলে কিছু লোকের সাথে দেখা হয়েছে তাদের কান্না দেখে আমার নিজের চোখে পানি চলে আসছিল৷ একজন মিশরীয় নাগরিককে মাত্র তিন বছর বয়সি বাচ্চাকে নিয়ে জেলে দেখেছি৷
অনেক লোক বাংলাদেশ থেকে আসার পর ২৫ লাখ টাকা খরচ করেও এখনও লিবিয়া থেকে ইটালি যেতে পারে নি৷ এখানে পুলিশে কিছুদিন আটক রেখে পুনরায় মাফিয়া বা মানবপাচার চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়৷
ইনফোমাইগ্রেন্টস: এই যে ঢাকা থেকে দুবাই, তারপর সেখান থেকে সিরিয়া, লিবিয়া কোন প্রকার ভিসা ছাড়া এটা তো একটা আন্তজার্তিক চক্র ছাড়া কারও পক্ষে সম্ভব না৷ আপনি কী মনে করেন?
মাহমুদ: এটি একটি বিশাল চক্র৷ তারা গ্রুপে গ্রুপে ঢাকা থেকে দুবাই আনে সবাইকে৷ এসব দরিদ্র লোকেদের সংযুক্ত আরব আমিরাত কেন অযথা ভ্রমণ ভিসা ইস্যু করবে কিংবা বাংলাদশ কর্তৃপক্ষই ইমিগ্রেশন পার হতে দিবে কেন? সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের বিষয় দুবাই এয়ারপোর্টে আমাদের কারও পাসপোর্টে সিল মারা হয় নি৷ একসাথে এতগুলো বাংলাদেশি সেখান থেকে লিবিয়ায় কেন ফ্লাইট করবে এটি তো কর্তৃপক্ষের জানার কথা৷
বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিরিয়া এবং লিবিয়া সবগুলো দেশের উচ্চ পর্যায়ে মানবপাচার চক্র বা মাফিয়াদের সংযোগ ছাড়া নিয়মিত হাজারো লোককে এভাবে পাচার করা সম্ভব না৷
এখন আমার আর পেছনে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই৷ বারবার চেষ্টা করতে হবে গেইম মারার৷ কারণ সব টাকা খরচ করে ফেলেছি৷ যারা বাংলাদেশ থেকে এভাবে আসতে চান তারা আমার অভিজ্ঞতা শুনেই সিদ্ধান্ত নিবেন এই পথে জীবনের ঝুঁকি নিবেন কি না৷
পড়ুন>>লিবিয়ায় অভিবাসীদের নতুন আতঙ্ক এএসএস বাহিনী
এটি কঠিন এক পথ! ৯০ ভাগ ঘটনায় মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।
এমএইউ/এফএস