ভূমধ্যসাগর: অভিবাসীদের মধ্যে শিশুসহ অনেকেই নির্যাতনের শিকার
গত বৃহস্পতিবার ওশান ভাইকিং জাহাজ মধ্য ভূমধ্যসাগর থেকে অভিবাসীদের দুটি দলকে উদ্ধার করে৷ সিসিলিতে জিও ব্যারেন্টস থেকে নামতে বাধা দেয়ায় বেশ কয়েকজন অভিবাসী সমস্যায় পড়েন৷
গত বৃহস্পতিবার ওশান ভাইকিং জাহাজ মধ্য ভূমধ্যসাগর থেকে অভিবাসীদের দুটি দলকে উদ্ধার করে৷ সিসিলিতে জিও ব্যারেন্টস থেকে নামতে বাধা দেয়ায় বেশ কয়েকজন অভিবাসী সমস্যায় পড়েন৷
অভিবাসন সংস্থা ও এনজিওগুলো বছরের পর বছর ধরে ভূমধ্যসাগরে দ্বীপরাষ্ট্র মাল্টার ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ করে আসছে। চলতি মাসে একটি হালনাগাদ প্রতিবেদনে ইউরোপীয় কাউন্সিল অব রিফিউজিস অ্যান্ড এক্সাইলস (ইসিআরই) আবারও দেশটির কট্টর অভিবাসননীতির নিন্দা জানিয়েছে।
আবারও নতুন করে সলিল সমাধির সাক্ষ্য হল ভূমধ্যসাগরের টিউনিশিয়া উপকূল। শুক্রবার সকালে দেশটি নিরাপত্তাবাহিনী স্ফ্যাক্স উপকূলে একটি নতুন নৌকা ডুবির কথা জানায়। প্রাথমিকভাবে নৌকায় থাকা ৫০ জনেরও বেশি অভিবাসীর মধ্যে তিনজন নিহত এবং প্রায় এক ডজন ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে।
গত এক সপ্তাহে এক হাজারেরও বেশি অভিবাসী ইটালির লাম্পেদুসা দ্বীপে এসেছেন। দ্বীপটির প্রথম অভ্যর্থনা কেন্দ্রটি ইতিমধ্যে পূর্ণ হয়ে গেছে। দ্বীপের মেয়রের মতে, অত্যধিক অভিবাসী নৌকা স্থানীয় জেলেদের কাছে একটি বড় সমস্যা ও সম্ভাব্য বিপদের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
রোববার, ৮ মে সন্ধ্যায় ভূমধ্যসাগরে মানবিক উদ্ধার জাহাজ সি-ওয়াচ-৪ ৮৮ জন অভিবাসীকে সমুদ্রের প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করে৷ মাল্টা উপকূলে অন্য একটি পণ্যবাহী জাহাজ থেকে আরো ৩৪ জনকে উদ্ধার করে সি-আই৷ এসব অভিবাসীরা মাঝ সমুদ্রে টানা চার রাত ভেসেছিলেন বলে জানা গেছে৷
দশ দিন সমুদ্রে থাকার পর উদ্ধারকারী জাহাজ ওশান ভাইকিং ইটালির সিসিলিতে নোঙর করেছে৷ জাহাজে থাকা অভিবাসীদের নিরাপদে সেখানে আশ্রয় নেয়৷ তবে উদ্ধারকাজের সময় ইইউর ব্যর্থতায় হতাশা প্রকাশ করেছেন উদ্ধারকারীরা৷
লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের বিরুদ্ধে ভূমধ্যসাগরে উদ্ধারকারী জাহাজ সি-আই ফোরকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ লিবিয়ান কোস্টগার্ডের অভিযোগ, উদ্ধারকারী জাহাজটি বুধবার ‘লিবিয়ার ভূখণ্ডে’ অবস্থান করছিল, তবে সি-আই এর দাবি তাদের জাহাজটি তখন আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিল৷
বেসরকারি সংস্থা ‘এসওএস মেডিটেরানিয়ান’ মধ্য ভূমধ্যসাগরে বিপদে পড়া প্রায় ১৩০ অভিবাসী এবং শরণার্থীকে উদ্ধার করেছে৷ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে তারা৷
মধ্য ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীদের উদ্ধার অভিযান চলছে৷ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এপ্রিল মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত চার হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে লিবিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
ভূমধ্যসাগরে উদ্ধারকারী জাহাজ ওশান ভাইকিং ও জিও ব্যারেন্টস দুটি আলাদা অভিযানে ১৭০ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে। অপরদিকে একই সময়ে লিবিয়ার মিসরাতা সমুদ্র সৈকত থেকে ইউরোপ অভিমুখে রওনা দিতে যাওয়া ৫০০ অভিবাসীকে আটক করে কর্তৃপক্ষ। আটক হওয়াদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের নাগরিক বলে জানা গেছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সলিল সমাধি হিসেবে আখ্যা পাওয়া ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূলে গত শনিবার আবারও একটি নৌকাডুবিতে মারা গেছেন ছয় অভিবাসী। আন্তজার্তিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম জানিয়েছে, এই ঘটনার নিখোঁজ রয়েছে আরও ২৯ জন। ধারণা করা হচ্ছে, নিখোঁজ অভিবাসীদের কেউই আর বেঁচে নেই।
সোমবার লিবিয়া উপকূলে অভিবাসীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে চারজন প্রাণ হারিয়েছেন, নিখোঁজ আছেন আরো ১৪ জন৷ লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টায় চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷